প্রথম প্রথম কলেজে এসেছি । শুনেছি কলেজে প্রথম প্রথম আসলে নাকি সকলের পাখা গজায় । আমার ও মনে হয় একই অবস্থা । দীর্ঘ রাত দিন পড়শোনা করে আজ এ প্লাস পেয়ে এসএসসি পাশ করেছি । আমি মোটেও খারাপ ছাত্রী না । তবে একটু দুর্বল মানে অন্যদের থেকে ধীর । আর বেশি অলস.... মানুষে খেতে স্নান করতে সময় লাগে ১০ মিনিট আর আমার লাগে ১ ঘন্টা বা তার বেশি ।
যাই হোক আজ কলেজে এসেছি ভেবেছি নবীণবরণ-টরন কিছু একটা হবে । কিন্তু কই সবাই দেখি ক্লাসে বসে আছে । আর সামনে স্যাররা বক্তৃতা দিচ্ছে । বক্তৃতা দেওয়া শেষ হলে স্যারেরা আজ পরীক্ষা রুটিন ধরিয়ে দিলো । মানে কি এসবের ! কলেজে ঢুকতে পারলাম না তার আগেই পরীক্ষা । সকলে মন মরা হয়ে বসে আছে । আর আমার চোখ দিয়ে জল বের হয়ে গেল । হঠাৎ করে আমার পেছনে নিধি এসে দাঁড়ালো,
“কি রে! কি অবস্থা ? কেমন আছিস?”
“ভালো না । দেখলি তো পড়ি তো নাই কিছু , তারপর আমি ভেবেছিলাম একটু এনজয় করবো তা আর হলো কই । রুটিন দেখে মাথা ঘুরে গেছে ।”
“আরে টেনশন করিস না । আমরা তো আছি তাই না ? চল তোকে কিছু নোটস দিচ্ছি ওগুলো দেখে পড়ে নিস তাহলেই হবে ।”
“ধন্যবাদ ছোট্টবন্ধু” আমি টেলিভিশনের উপস্থাপকদর মতো করে বল্লাম ।
“তোর তো দেখছি মজা করার স্বভাব যায়নি । চল বাইরে চল । আজ তো ছুটি দিয়ে দিয়েছে । মাঠে গিয়ে ঘুরে আসি ।”
“চল।”
মাঠে গিয়ে হাটতে হাটতে দুজনে মিলে অনেক গল্প করলাম আর তারপর বাড়িতে ফিরে এলাম । বাড়িতে এসে মা একগাদা কাজ হাতে দিয়ে দিলো । মানে বাসায় গেস্ট আসবে ঘর গুছিয়ে রাখতে বলল । আমি ঘর গুছিয়ে এসে শুয়েছি আর ল্যাপটপে ফেসবুকে লগইন করেছি । আমার আবার বাটন ফোন । বাবা ইন্টার পাশ না করা পর্যন্ত বড় ফোন নিতে দেবে না । আমিও মেনে নিলাম আরকি । লগইন হবার পর দেখি আমাকে কলেজ গ্রুপে কে যেন এড করেছে । বাহ্ কলেজের গ্রুপ ও তৈরি হয়ে গেল একদিনে । আমি ওদের সবার মেসেজ দেখতে গেলাম । কিছু কিছু মেয়েরা গ্রুপ থেকে লিভ নিচ্ছে । আর ওরা মেসেজে লিখছে আপুরা চলে গেল কেন কেউ তো কিছু বললা্মই না । হঠাৎ দেখি একটা ছেলে তার বন্ধুর ছবি দিয়ে যাচ্ছে । অনেক ছবি মানে গুনে শেষ করার মতো না । সব ছবিতে সে রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে । ভালোই দেখতে মানে হ্যান্ডসাম বলা যায় । আমার আবার কৌতুহল হলো তাই আইডি চেক করা শুরু করলাম । বেশ ভদ্র ভদ্র ছবিই আছে আর আমি যেখানে থাকতাম তার পাশের স্কুলেই ছিল । আগে কোনোদিন দেখিনি । আরেহ্ আমি এসব ভাবছি কেন ? আর আইডি টাই বা ঘা্টছি কেন? থাক বাদ দেই । লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লাম ।
বেশ কিছুদিন কেটে গেল কলেজে যাই আবার যাই না । অত গুরুত্ব দেয় না কেউ । ভেবেছিলা খুব কড়াকড়ি হবে , তা আর হলো না । হেলায় ফেলায় চলছিলো । আমি আবার নিধির সাথে একসাথে আসতাম । যেদিন ও যেত সেদিন যেতাম , যেদিন ও যেত না সেদিন যেতাম না । একদিন এক স্যার লেটে আসতে দেখে ধরল আমাকে আর ওকে ধরল …
“ তোমরা এত দেরিতে কেন?”
নিধির মা অসুস্থ ছিল তাই সে বলল “স্যার মা অসুস্থ ছিলো তাই রেডি হতে গিয়ে দেরি হয়ে যায় ।”
আমার দিকে তাকিয়ে স্যার বলল “তোমার কেন হলো?”
আমি যে ওর সাথে যাওয়া আসা করি সেটা বললাম । আর স্যার ওকে ছেড়ে আমাকে ধরল “রোল বল ।”
আমি রোল বললাম । স্যার বলল “ও যেদিন আসে তুমিতো সেদিনও আসো না । আমার সাথে মিথ্যা বলার সাহস কি করে হয় ?তোমার প্র্যাক্টিক্যাল আমি নেব না । তুমি সবার প্র্যাক্টিক্যাল জমা দেবার পর জমা দেবে আর সবার শেষে তোমার খাতা পাবে ।
বাইরে এসে আমি কান্না করে দিলাম । খাতা পরে পাব এই ভেবে না, স্যার আমাকে খারাপ ভাবে দেখল তাই । আমি তো মিথ্যা বলিনি । নিধি আমাকে সামলালো । আমি বাড়ি চলে এলাম ।
মন খারাপ ছিল তাই ফেসবুকে গেলাম । কলেজ গ্রুপে আমাকে নিয়ে কথা হচ্ছে। সবাই বলাবলি করছে যে কিভাবে আমি বকা খেয়েছি । একজন তো বলেই ফেলল যে সে নাকি খাতা জমাই দেবে না যাতে আমি খাতা জমা না দিতে পারি । আমার মন খারাপ হয়ে গেল । রাগে ল্যাপটপ ভাঙতে ইচ্ছা করছে। আমি ছেলেটার নাম দেখলাম । কালকে গিয়ে আচ্ছা করে কথা শোনাবো । আমি ঘুমিয়ে গেলাম ।
সকালে উঠে গ্রুপে দেখি ছেলেটাকে গ্রুপে পাওয়া যাচ্ছে না । সে নাকি লিভ নিয়েছে । আর তার আইডিও আর শো করছে না । আইডি নাকি ডিঅ্যাকটিভ করা । মানে কি ! এভাবে লিভ নিয়ে চলে গেল ?
আমি কলেজে এসেও দেখি সে নেই । আর গ্রুপেও আমাকে নিয়ে আর কথা হচ্ছে না । সবাই চুপচাপ । কথা হলেও অন্য বিষয়ে হচ্ছে । আমি বুঝতে পারলাম না । খোঁজার চেষ্টা করলাম কিন্তু লাভ হলো না ।একসময় ছেড়ে দিলাম কারণ লাভ নেই । আমি আমার পড়ায় মনোযোগ দিলাম ।
আমি মোটামুটি গান গাইতে পারি । সবাই বলে খুবই ভালো পারি । তাই শহরে বড় অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে গান গাই ।নিধি ছাড়া কেউ জানে না কলেজে এ ব্যাপারে । একদিন গ্রুপে পড়া নেবার জন্য লিখি যে আগের দিন কি পড়া ছিলো । একটা রিপ্লাই আসলো …. ছেলেটা বলল ,
“আপু মনে হয় অনেক পড়াশোনা করে বেশি”
আমি রেগে গেলাম আর বললাম “তোমাদের এসব কথাবার্তার জন্য কোনো মেয়ে এই গ্রুপে থাকে না । আমিও বের হয়ে যাব ।”
হঠাৎ সেই ছেলেটা রিপ্লাই দিলো যার আইডি আমি ঘা্টছিলাম ,
“আপনি চলে যাবেন না ওরা এরকমই । ওদের কে ক্ষমা করে দেন আর আমি যেহেতু ক্লাসে ওতো যাই না তাই আমি পড়া বলতে পারছি না । সরি ।”
আমি বললাম “বুঝলাম । আর কেউ যেন এভাবে কারো সাথে কথা না বলে । নাহলে কোনো মেয়ে গ্রুপে থাকবে না ।”
সবাই সরি লিখতে থাকলো । আমি অবাক যে এত তাড়াতাড়ি সবাই আমার কথা মেনে নিলো ।
ছেলেটার নাম অনয় । নামটা শুরুতে পড়তে গিয়ে আমি কয়েকবার ভুল করে অয়ন বলে ফেলছিলাম । কারণ আমার ভাইয়ের নাম অয়ন । অয়ন গ্রুপে লিখলো,
“আপনি তো ফেমাস , ভালোই গান করেন । আমাদের গান শোনাতে হবে কিন্তু ।”
আমি বললাম “ঠিক আছে । শোনাবো।”
তারপর কেটে গেল কিছুদিন । একদিন আমাকে অনয় মেসেজ দিলো তাও ইনবক্সে । আমার খুশি খুশি লাগছে আবার নাচতে ইচ্ছা করছে । তারপর থামলাম “নাহ্ কি লিখেছে আগে দেখি ।”
অনয় লিখেছে “অনি তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা আছে ।”
আমার পুরো নাম অনিন্দিতা তাহলে আমাকে অনি বলছে আবার তুমি করে কথা বলছে ।আমি আনন্দে আত্মহারা হয়ে বললাম “বলো কি বলবে?”
সে লিখলো “নিধির নাম্বারটা কি তোমর কাছে আছে?খুব দরকার আমার।”
আমার সব স্বপ্ন ভেঙে গেল । তাহলে কি ও নিধিকে পছন্দ করে ?
চলবে........
