Linksstories

linksstories` logo
শেষ ঠিকানা তুমি - পার্ট 1 | Bangla Thriller Story

শেষ ঠিকানা তুমি – পার্ট 1 | Bangla Thriller Story

অয়ন্তিকার একা সময় গুলো তে আরো অরিন্দমের অভাব গুলো বেশি করে মনে ধরলো। যত দিন যাচ্ছে ওর মনে পড়ছে অরিন্দমের ওর রাগ ভাঙাতে করা কাজগুলো কে।

রোবটের মত অয়ন্তিকার দিনকাল কাটতে থাকে। অনু সেরকম কথাবার্তা বলে না ইদানিং খুব অস্থির লাগে ওর , মা-বাবার সাথে কথা হলেও ওরা অরিন্দমের কথা জানতে চায়। ও টুকটাক কথা বলে রেখে দেয় ওদের এখনো ওদের ডিভোর্সের ব্যাপারটা জানানো হয়নি। আজকাল যতক্ষণ কাজ করে ততক্ষণই যেন ভালো বাকিটা সময় অয়ন্তিকার কাছে যেন অনেক টা শেষ হতেই চায় না।

অনুর দিকে তাকিয়ে দেখলে মনে হয় অরিন্দমের এইভাবেই চলে যাওয়ার জন্য বোধহয় ওই দায়ী। ওর মাঝে মাঝে মনে হয়।

কিছু সময়  মন যখন মানুষের মাথা অনুযায়ী কাজ করেনা বরং ঠিক উল্টো কিছু করতে সায় দেয়। প্রথম ভালো লাগা যখন গাঢ় হয়ে ভালোবাসা তে পরিণত হয়।অপরিণত বয়সে সেই অনুভূতি গুলো বরং অপরিপক্ক থাকে কিন্তু একটা বয়সে আমরা যখন পরিণত হই বুঝতে শেখে। কিছু অনুভূতি সময়ের সাথে সাথে অভিমানের মধ্যে তলানিতে থামে। কিন্তু সেটা যখন মনে বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে ওঠে তখন পরিস্থিতি চারপাশের তাল মিলিয়ে যায়।এই মুহূর্তে সেটাই হয়েছে,

ঘরের চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে রয়েছে অয়ন্তিকার জামাকাপড়, একবার গুছিয়ে রাখছে, একবার অগোছালো করছে আদৌও কি করতে চাইছে ও নিজেই মনে করতে চাইছে না।মন এতো ঘনঘন অন্যমনস্ক লাগছে তার কারণ অবধি ভাবতে বিরক্ত লাগছে। এই কারণেই আপাতত লিভ নিয়েছে ডিউটি থেকে,যেখানে ডক্টরের নিজের মন এতো অস্থির সেখানে সে কিভাবে বাকিদের মন ভালো রাখবে?এতো বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে কোন কাজ ই করা সম্ভব নয় সেটা ও ভালো করেই জানে। সমস্যা কোথায় কার জন্য সবকিছু, এটা কেন হচ্ছে সবটাই বোঝে অয়ন্তিকা।ও এখনো ভুলতে পারছে না অরিন্দম এখানে নেই,ফিরবে না ওর ধরাছোঁয়ার বাইরে মানুষটা।

অনু যখন সাড়া না পেয়ে ঘরে এসে দেখলো এরকম দুরাবস্থা ঘরের। রীতিমত হা করে তাকিয়ে রইলো,ওর জানামতে অরিন্দম আর অয়ন্তিকা দুজনেই গোছানো বরং অয়ন্তিকা আরেকটু বেশিই।হাতে করে আনা খাবার টা পাশের টি টেবিলে রেখে অয়ন্তিকার পাশে বসে ওর কাঁধে হাত রেখে বললো,

দি একি করেছো ঘরটা? তুমি খুব  টেন্সড! আমাকে বলো তাহলে ।

না না কিছু না জাস্ট ওই এতো কাজ করে ইরিটেট ফীল করছি (অয়ন্তিকা)

ঠিক তো?আর কিছু নয় তো? (অনু)

না রে পাগলী বলছি তো ঠিক আছি। (অয়ন্তিকা)

বেশ যখন বলতে চাইছো না আশা করি সেরকম গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। আমি বলছি দাদাকে তোমার সাথে আর কথা বলেছে।(অনু)

না।

অনু কিছুক্ষণ অয়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে দেখলো, তারপর বললো,

তাহলে কি জন্য এতো চিন্তা তোমার? দাদা তো চলেই গেছে তোমার তো ভালো থাকার কথা দি তাই না?

অয়ন্তিকার হুট করেই অরিন্দমের মুখটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। সেদিনের শেষ কথাগুলো ওর মনেই চলে এলো, কদিন আগেও তো অরিন্দম রোজ ওর সামনে কত কি করতো। জামাকাপড় গোছাতে গিয়েও দূরে ঠেলে দিলো।

তাই হুট করে উঠেই আবারো বসে পড়লো অনু কে বললো,

তুই ও কি  তোর দাদার মতো আমাকে একা করে দিতে চাস? বল না তুই ও কি!

অনু যেতে গিয়ে ও ফিরে এলো অয়ন্তিকার এইরকম অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে।

খাবার গুলো নিয়ে যা, নষ্ট হবে বেকার। আমার জন্য এতো যত্ন করিস না আমার জন্য তোর দাদা এইখানে নেই তাও কিভাবে?

কেন? আমার দাদার করা কাজের দায়ভার তো আর খাবারের নয় দি। তাহলে ওরা কি দোষ করেছে ? খেয়ে নিও রামু কাকা বলছিল তুমি বড্ড অনিয়ম শুরু করেছ।

আমি আর পারছি না রে এইভাবে থাকতে, ভালো লাগছে না বিশ্বাস কর বলেই হাঁটু তে মুখ গুঁজে দিলো অয়ন্তিকা।

অনু রেগে গিয়ে বললো,

দিইই! কি করছো এসব? এইরকম থাকলে দাদা কষ্ট পাবে,প্লিস এরকম করো না।

আমি কি করবো বলে দে? নিজে তো দূরে গিয়ে ভালো আছে আমি রোজ ওর প্রতি অবিচার করা গুলো কে মনে করে অনুশোচনায় ভুগছি এটার থেকে ভালো…

অয়ন্তিকার এইরকম অবস্থা দেখে অনু ওকে জড়িয়ে ধরলো, আর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,

কি হয়েছে ? আমাকে বলো তোমার বোন হই তো বলো।

অনুর এরকম কথায় অয়ন্তিকা শুধু বললো,

ছাড় বাদ দে।

______

চারদিকে ছড়িয়ে পড়া নরম রোদের আলোতে ছবির মতো সুন্দর লাগছে পরিবেশটা, সমুদ্রের একদম শুরুর ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে অল্প হাঁটুর নিচ অব্দি জলে অরিন্দম। সকালের আলতো রোদ সেরকম গায়ে লাগছে না হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছে সব গায়ের অস্বস্তি গুলো। এইরকম ভাবে দাঁড়িয়ে অরিন্দম কে কোন সুদর্শন সুপুরুষ হিসেবে ভাবলেও মন্দ নয়। শুধু অভাব বোধহয় একজন সঙ্গীর।

এই সময় অরিন্দম কে সঙ্গী ছাড়া মানুষের তালিকায় ফেলে দেওয়া যায় অনায়াসে। ওর ঘন কালো চোখের তারার সুদূর নজর বাধ্য করছে ভাবতে কারোর অভাব বোধ হচ্ছে ওর।যার কারণে ওর মুখের হাসিটা অদৃশ্য হয়ে গেছে।দূর থেকে যে নিজের প্রেয়সীর খোঁজ খবর রাখে হোক না আড়াল তবুও তো এই বুকের অশান্ত মনটা একটু স্থির থাকে।ওর মনের ইচ্ছা পূরণ হোক, সজ্ঞানে মুখোমুখি তাকে কোন একদিন জিজ্ঞেস করুক, ভালো আছো?

অনেকক্ষণ বাদে নিজের রুমে ফিরে এসে অরিন্দম নির্দিষ্ট ফোনের নম্বর ডায়াল করে,

অনু এতোক্ষণ অয়ন্তিকার কাছেই ছিল,ও অনেক কষ্ট করে খাবার খেতে রাজি করে ঘরে এসে অরিন্দমের ফোন দেখে নিজের মনে বললো,

বাবাহ ভালো মিল আছে দুটো মানুষের, একজন খবর নিতে ফোন করছে আরেকজন তার দূরে যাওয়ার বিরহে কেঁদে ফেলছে।নাহ আর অপেক্ষা না করে ফোনটা তুলি।

হ্যালো ; এতোক্ষণ লাগে ফোনটা তুলতে তোর ?

ওপাশ থেকে অনু ফিচেল হেসে বললো,

বিরহ বুঝি সহ্য হচ্ছে না?

মানে ? এই তোর কি হয়েছে রে?(অরিন্দম)

কিছু না কিন্তু এবার হবে। (অনু)

খোলসা করে বল। (অরিন্দম)

সে যতই রাগ দেখা,আমি ছাড়া বউদির খবর তো পাবি না আর সরাসরি ফোন ও করবি না যা করেছিস। সো একটু সুযোগ পেয়েছি তোকে তো জ্বালাবোই। (অনু)

আমি জানি সবটাই এবার কিকেস আমাকে বল, ওর খবর না নিলে আমার কিরকম হয় বোঝাতে পারবো না ।(অরিন্দম)

তাহলে গেলি কেন? আবার শখ করে ডিভোর্স পেপার দিয়েছে যতোসব, আমি বুঝি না তোকে বিসনেস ম্যান কে বানিয়েছে ? এই বুদ্ধি নিয়ে সত্যি ব্যবসা সামলাস? বিশ্বাস হয়না রে লস খাসনি আমি অবাক হচ্ছি কারণ তুই নিজের প্রেমের লাইফে আস্ত গাধা। (অনু)

বোন অপমান করিস না মানছি ভুল হয়েছে কিন্তু ওখানে থাক অন্তত আমার কদর করবে নয়তো বল এই মুহূর্তে কি হয়েছে?(অরিন্দম)

আপনার বউ আপাতত ছুটি নিয়ে ঘরে বসে আপনার বিরহে দিন কাটাচ্ছেন আর ঘরময় পুরো অগোছালো করে বসে আছেন। আর কিছু শুনতে চাস?(অনু)

ছবি তুলে পাঠাস (অরিন্দম)

তারপর তোর বউ বুঝে যাক এখানকার খবর লন্ডনে পাচার করছি আর সেটা বন্ধ করে দিক। (অনু)

সোনা বোন আমার, এটুকু পারবি না। তুই কত ভালো। (অরিন্দম)

এতো তেলের দাম কেন এবার বুঝছি, রোজ এই খবর পাচার করার জন্য আমাকে এতো তেল লাগাস তাই জন্য বাড়ছে ।(অনু)

ফালতু কথা কম বল তুই ।(অরিন্দম)

চলবে…

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top