Linksstories

linksstories` logo
শেষ ঠিকানা তুমি - পার্ট 2 | Bangla Thriller Story

শেষ ঠিকানা তুমি – পার্ট 2 | Bangla Thriller Story

আরেহ শোন না গিয়ে দেখি ঘরের জামাকাপড় সব ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা,জানিস দি এখন ঠিকঠাক খাওয়া দাওয়া করছে না। বুঝিয়ে বলার পর একটু খেলো ঘরে জামাকাপড় গুলো গুছিয়ে এলাম এসে দেখি তুই ফোন করছিস। দাদা তুই সত্যি কি ডিভোর্স দিয়ে দিতে চাস?

অনুর কথা শুনে অরিন্দম শুধু হেসে বলল,

তোর কি মনে হয়? আমি দেবো ওকে ডিভোর্স!

কি জানি কি হয় তবুও !(অনু)

রাখছি বেরোতে হবে রে । (অরিন্দম)

ফোনটা রেখে দিয়ে অরিন্দমের মুখে একটা হাসি ফুটে উঠলো আর নিজের মনেই বললো,

এবার তুমি বুঝতে পারবে অয়ন্তিকা, ভালোবাসার মানুষ পাশে না থাকলে কতটা কষ্ট হয়। তুমি জানো সে আছে না কথা বলতে পারবে না দেখতে পারবেনা তুমি জানো তোমার সাথে তো যোগাযোগ থাকবে না তুমি নিজের দোষে তাকে দূরে ঠেলে দিয়েছো। নতুন করে তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলবে , আগেরবার তো প্রেমে পড়েছিলে এবার না হয় নতুন করে আমার মধ্যে নিজেকে খুঁজে বের করবে। একবার দেখতে চাওয়ার জন্য এখানে আসবে, ঠিক  এইখানে এই বুকের মধ্যে আসবে ,এই অরিন্দম স্যানাল এর কাছে এসে ধরা দেবে আমাকে ছাড়া ভাবতে তোমার মন সায় দেবে না কোনদিন। পুরোপুরি মিশিয়ে নেবেন নিজেকে।

দরজা নক করে একজন সার্ভেন্ট  এসে বললো,

আপনার ব্রেকফাস্ট  স্যার,

খেতে বসে অরিন্দমের হুট করে মনে পড়লো একদিন সকালে এরকম ব্রেকফাস্ট তৈরি করে অয়ন্তিকার জন্য বসেছিল আর অয়ন্তিকা খেয়েও কিছু না বলেই উঠে গেছিল। ভালো করে আর খেতে পারলো না ও।

__________

অনুর খাইয়ে দিয়ে চলে যাবার পর অয়ন্তিকা কিছুক্ষণ ধরে শাওয়ার এর তলায় দাঁড়িয়ে পড়েছিল। একটানা ভিজে থাকায় কিছুক্ষণ সময় জামাকাপড় পড়ে বিছানায় শুয়ে পড়লেও এই মুহূর্তে ওর মাথাটা ধরে আছে,কেমন গা হাত ম্যাজ ম্যাজ করছে। বোধহয় জ্বর আসবে। এটা নতুন নয় একটানা বৃষ্টি বা জলে ভিজে থাকলে আগামী কদিন জ্বর চলে আসে অয়ন্তিকার।উঠে সামান্য যে জলটা খাবে সেটাও ইচ্ছে করছে না ওর। জ্বরের ঘোরে থাকা তিতকুটে মুখে একটা গা ছাড়া ভাব ওর, চুপচাপ কাঁথা মুড়ি দিয়ে আবার যেই কে সেই শুয়ে পড়া।

অনেকক্ষণ পরে অনু যখন অয়ন্তিকার কাছে এলো , দুপুরবেলা ঘরের সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে অয়ন্তিকা এই অবেলায় শুয়ে।ওর এমনিই সকাল থেকেই অয়ন্তিকার এইরকম হাবভাব দেখে ঠিকঠাক মনে হচ্ছিল না। অয়ন্তিকার গায়ে হাত দিয়ে অনু দেখল ওর শরীর টা ভীষণ গরম। পুরো গা যে জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, তড়িঘড়ি  ছুটলো নিচে রান্নাঘরে জল নিয়ে জলপট্টি দিতে বলে রামু কাকা কে, ফোন করে ডক্টর আঙ্কেল কে ডাকলো জ্বর উত্তরোত্তর বাড়ছে যে। নিষদ কাকে দেখে বললেন হয়তো অতিরিক্ত টেনশন এসেছে ঠান্ডা লেগেছে খুব তাই চিন্তা করার কিছু নেই ওষুধ দিয়ে দিলে কাল কের মধ্যে জ্বর থাকবে না আর অরিন্দম কোথায়? জিজ্ঞেস করতে অনু বললো একটু বাইরে গেছে বিসনেসের কাজে। এই করেই কোনরকম ওনাকে কাটিয়ে দিলেও অয়ন্তিকার শরীর খারাপের সময়টা ভালোই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনু আর রামু কাকা কে । দুজনে মিলে সারাদিন ধরে অয়ন্তিকার সেবা করে, যখন শুলো তখন রাত গড়িয়েছে।

পরেরদিন সকালে অয়ন্তিকার চোখ খুলে দেখল চেহারে অনু শুয়ে আছে আধশোয়া হয়ে আর ওদিকে রামুকাকা ঘরের মেঝেতে বিছানা করে ঘুমাচ্ছে। দুটো মানুষের ওর জন্য এইরকম অবস্থা দেখে নিজের করা কাজগুলো তে এই প্রথম ভারী রাগ হলো ওর নিজের ই, কাল যদি ওইরকম ভিজে না থাকতো তাহলে তো আর জ্বর এসে এদেরকে ঝামেলা পোহাতে হতো না। ধুস কি যে হয় ,হুট করে অনুর গায়ে হাত পড়তেই, ওর ঘুম ভেঙ্গে গেল। ধরফড় করে উঠেই বললো,

তুমি ঠিক আছো তো! আর অসুবিধা নেই তো তোমার? গা ব্যাথা হচ্ছে?

না আমি পুরো ফিট রে তোর সেবায়। আমার জন্য অনেক কিছু ঝামেলা হলো বল? অনেক ভুগিয়েছিল আমি তাই না! পরলে রে আমার একদম উচিত হয়নি ওইভাবে শাওয়ার ছেড়ে ভেজা টা।(অয়ন্তিকা)

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো,

তুমি এইভাবে ঠান্ডা লাগিয়েছো ,দাদা জানলে আর রক্ষে থাকবে না ইয়ে মানে তোমার খেয়াল রাখতে বলেছে । এইবার তুমি যদি এরকম করো সেটা তো ঠিক নয়। আচ্ছা দি তুমি তো একবার লন্ডনে যেতে পারো ,দাদা ট্রাই করেছে তুমিও করো তাহলে তো সব ঠিকঠাক হয়ে যায় আমি জানি তোমাদের অভিমান মিটিয়ে নিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে আবার তোমার মা বাবাও মেনে নিয়েছে।

অনুর  কথাগুলো শুনে একবার অয়ন্তিকারো  মনে হল চেষ্টা করাই যায় অরিন্দম না হয় এক পা এগিয়ে এসেছে এবার অয়ন্তিকার পালা তার কাছে দু পা এগিয়ে সম্পর্কটা কে আরেকবার সুযোগ দেওয়া।

তাই অনুর কথার উত্তরে বললো,

ভাবছিলাম সেটাই কিন্তু ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না আমি।যদি সে ফিরিয়ে দেয় , প্রথমবার আমিই ফিরিয়ে দিয়েছি। যদি দেয় পাকাপাকি ডিভোর্স হয়ে যাবে আটকাতে পারবো না জানি আমি, আফসোস নেই বরং যদি না চেষ্টা করি তাহলেই আফসোস হবে।

সেইটাই তো বলতে চাইছি আমি তুমি একবার ট্রাই তো করো ওখানে গিয়ে দেখো।দেখবে সব ভালো হবে,তাহলে পাসপোর্ট টা বানাতে দিয়ে দেবো? (অনু)

কত সময় লাগবে রে? (অয়ন্তিকা)

তা তো জানি না তবে লাগবে , অপেক্ষা করতে হবে বুঝলে। (অনু)

সেইদিন রাতে অনু অরিন্দম কে ফোন করে জানিয়ে দিলো অয়ন্তিকা রাজি হয়ে গেছে লন্ডনে গিয়ে থাকার জন্য, ওর পাসপোর্ট আর বাকি যা প্রসেস আছে সব রেডি করিয়ে দিতে বললো। কিছু কথা বলে ফোনটি রেখে দিলো।

অরিন্দম এর সবটা শুনে মনটা বড্ড খুশি লাগছে ,একটাই কথা বলতে বলতে ইচ্ছে করছে ওর ,

খুব জলদি তুমি আমার কাছে আসবে মিসেস স্যানাল, আমার মায়ায় ধরা যখন দিয়েই দিয়েছো এই মায়া তোমার মুক্তি নেই তুমি আজীবন সেখানেই থাকবে যতদিন আমি বেঁচে আছি। দেখা হচ্ছে তাহলে আমাদের, তুমি জানো না কতটা ভালোবাসায় পুড়িয়ে তুমি আমাকে পাবে।

________

চোখের পলকে হুরমুড়িয়ে ছমাস কেটে গেছে, অয়ন্তিকা এই মুহূর্তে কাজের জায়গা কে স্থগিত রেখে নিজের মানুষ কে ফিরিয়ে আনার প্রবল ইচ্ছা রেখে বসে আছে লন্ডন যাওয়ার ফ্লাইটে।

জীবন কি সুন্দর চড়কিপাকের মতো ঘোরে তাই না! অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা থেকে একে অপরের সাথে জড়িয়ে পড়া তারপর সেখান থেকে একটা যোগসূত্র ধরে অনুভূতি এসে একেবারে কাছাকাছি আনার। সেখানে থেকে একটা সম্পর্কের মধ্যে বাঁধা তারপর অভিমান একে অপরের জন্য ভালোবাসা থাকা সত্ত্বেও মুখ ফুটে না বলা তারপর ওঠানামা ভিতরের মানুষ কে জেনে এগিয়ে এসেও অভিমানের মধ্যে চাপা পড়া ভালোবাসা কে উপলব্ধি করার সময় মানুষ টাকে আপনার কদর বুঝতে পারা, আরো একবার সুযোগ পেয়ে যেখানে থেকে শুরু হয় গল্প সেখানে দাঁড়িয়ে পড়া।

সারাটা রাস্তা অরিন্দমের কথা ভেবেই পার করেছে, এর মাঝে একবার ঘুম এলেও অ্যানাউন্সমেন্টে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। এয়ারপোর্টে নেমে দেখলো ওর নাম লেখা ব্যানার নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে।

আপনি কি আমাকে খুঁজছেন? মেয়েটার কাছে তাকে অয়ন্তিকা বললো।

আপনিই কি অয়ন্তিকা স্যানাল? মেয়েটার উত্তরে মিষ্টি হেসে অয়ন্তিকা বলার পর ওর কাছ থেকে নিয়ে বলল স্যার আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে উনি আপনাকে যেহেতু উনি মিটিং এ আছেন। আপনাকে সোজা সেফলি বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার ওপরই দিয়েছেন,আপনাকে রেখে আমি অফিসে ব্যাক করবো।

চলবে…

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top