Linksstories

linksstories` logo
শেষ ঠিকানা তুমি - পার্ট 3 | Bangla Thriller Story

শেষ ঠিকানা তুমি – পার্ট 3 | Bangla Thriller Story

ওকে ওর ঘরে পৌঁছে দিয়ে সার্ভেন্ট কে সবকিছু ঠিকঠাক বুঝিয়ে মেয়েটা চলে যাওয়ার পর । নিজের বরাদ্দ রুমে গিয়ে আগে ঘুমিয়ে নেবে ভাবলো এই সময়ে সার্ভেন্ট মেয়েটা এসে বললো, অরিন্দম বলে গেছে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমোতে। যেহেতু এটা থাকবে স্যার নেই যা লাগবে ওকেই জানাতে।

কিছু সময়  মনের অনুভূতি হল  নীল  আকাশের পেঁজা তুলোর ন্যায় উড়ে বেড়ায়। ক্ষণে ক্ষণে সে ডানা মেলে পাখির মতো শুধুমাত্র আকাশ জুড়ে বিচরণ করে শুধু। দৃশ্যটা যতটা ভালো লাগে ততটাই আশ্চর্য মনে হয় একটা বস্তু কতটা স্বাধীন হলে সে এরকম নির্দ্বিধায় ঘুরে বেড়াতে পারে সারা আকাশ জুড়ে। ঠিক এই মুহুর্তে অয়ন্তিকার নিজেকে ঠিক সেরকমই মনে হচ্ছে এখানে আসার পর থেকে কাজের চাপ নেই কোনো রকম অতিরিক্ত টেনশন নেই স্বাধীন হয় শুধু অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করে নিজের মনেই খুশি হয়ে উঠছে।

অরিন্দম যখন ফিরে এসে অয়ন্তিকা কথা জিজ্ঞাসা করল উনার জানালো অয়ন্তিকা আসার পর ফ্রেস হয়ে খেয়ে রেস্ট করছে, ঠিক যেমনটা ও বলে গেছিল। অয়ন্তিকার রুমের ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ওর ঘরে ঢুকে দেখলো, চারপাশে সব নিস্তব্ধ চুপচাপ কোনরকম সাড়া শব্দ নেই বরং বড্ড শান্ত। এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো অয়ন্তিকা আদৌও ঘুমোচ্ছে কিনা।একটু একটু করে বিছানার গা ঘেঁষে বসলো মুখ ঝুঁকিয়ে দেখলো, নিশ্চিত হয়ে অয়ন্তিকার পাশের কোলবালিশ টা জড়িয়ে আরামের ঘুমে।নাকের কাছে হাত এনে দেখলো ,গরম ঘন নিশ্বাস পড়ছে তার মানে গভীর ঘুম কিন্তু এই মুহূর্তে এরকম ভাবে দেখলে নির্ঘাত ঘুমটা ভেঙে বাজে একটা ব্যাপার হবে তার থেকে বরং ওর পাশেই  জায়গাটায় নিজের মতো করে শুয়ে পড়লো অরিন্দম।

অয়ন্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু খেয়ে গুড নাইট বউ বলে ঘুমিয়ে গেল অরিন্দম। বেঘোর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকায় অয়ন্তিকার এই গোপন আদরের কথা বিন্দুমাত্র জানা হলো না,জানা গেল না পাশের মানুষ টা কতটা সযত্নে ওকে রাখতে চায়।

ঘুমের ঘোরে অয়ন্তিকার হাতটা অরিন্দমের পেটের উপর পড়ার সময় আচমকা অরিন্দমের ঘুম ভেঙ্গে গেল ও সরিয়ে দিতে চাইলেও বরং অয়ন্তিকা আরো গা ঘেঁষে এসে বুকে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো। দূরে যতো সরাতচায় ততই কাছে এসে পড়ে শেষে দোনোমোনো করেই অরিন্দম অয়ন্তিকাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেল।

__________

আজকের একাই উঠে নিজের সব গুছিয়ে টেবিলে খেতে বসে পাশের চেয়ার দুটোর দিকে দেখে খেয়ে উঠে পড়লো অনু।

দাদা বউদির কথা মনে পড়ছে মামণি?

রামুকাকার কথায় সায় দিয়ে অনু বললো,

ঠিক বলেছো দুটোতে না থাকলে ও যেন সব ফাঁকা ফাঁকা তবু তো বউদি ছিল। এখন দুজনেই, কবে আসবে বলতো সবঠিকঠাক করে এদের যেন ভিতরের অভিযোগ শেষ হতেই চায় না।

ভিতরের এইগুলো তো দুটো মানুষের ভাব ভালোবাসা বাড়িয়ে দেয় গো, ওদের এই সবকিছু ওদের সম্পর্ক কে আরো মজবুত করে দেবে তুমি দেখো।যতটা দূরত্ব আছে সব ঘুচবে ওরা সুখী হবেই।

অনু শুধু মুখ ফুটে বললো,

কথাগুলো বাস্তবে হলেও খুব খুশি হবো গো। আমার দাদার জন্য মানুষটা একদম ঠিকঠাক। তাই ওদের আগামী টা খুব ভালো হোক।

সব ভালো হবে গো চিন্তা করো না মামণি। তুমি বেরোবে তো চলো দেখি।(রামু কাকা)

আমি এইতো তুমি সব লক করে রেখো কেমন? আমি এলাম (অনু)

_________

সকালে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় অয়ন্তিকা কোন ভারী জিনিসের কাছাকাছি নিজেকে চোখ খুলে দেখতে পেলো, ও অরিন্দমের বুকে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে ছিল,ওকে জড়িয়ে ধরে অরিন্দম ও ঘুমোচ্ছে। কোনরকমে নিজেকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করলেও উল্টে অরিন্দম ওকে জাপটে ধরে আবার শুয়ে পড়লো।

কোনরকমে নিজেকে অনেক কষ্টে ছাড়িয়ে চুলটা হাত খোঁপা করে নিলো, ওদের মধ্যে আদৌও সেরকম দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছিল সেটাই আর মনে হচ্ছে না ওদের দেখে। অরিন্দমের চুলটা এলোমেলো করে দিয়ে অয়ন্তিকা ফ্রেশ হতে চলে গেল। কিছুক্ষণ জলের আওয়াজ শুনে অরিন্দমের পাশের জায়গা টা হাতরে উঠে  ফাঁকা পেয়ে উঠে বসে চারপাশটা চোখ কচলিয়ে ঘুরে ফিরে একবার দেখে নিলো।

অয়ন্তিকা একটু পর বেরিয়ে এলো, অরিন্দম কে দেখে না দেখার ভান করে বললো,

ঘুম ভাঙ্গার পর উঠে পড়তে হয়,বসে বসে বাসি বিছানায় আকাশ পাতাল ভাবতে নেই।

একটু পরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার টেবিলে বসে দেখলো সার্ভেন্ট বাইরে দাঁড়িয়ে আছে,তাদের জিজ্ঞেস করার পর জানতে পারলো ওদের সরিয়ে অয়ন্তিকা নিজেই রান্না করছে। তাই কিছু বললো না অপেক্ষা করলো, এরপর যখন অয়ন্তিকা এলো ,খেতে বসেছি অরিন্দম বললো,

কাজের জন্য সব লোক রেখেছি । যা দরকার হবে ওদের বলবে ।আমাকে বললে পাশের জায়গা ঘুরিয়ে আনবো এতো কিছু করতে হবেনা। ঘোরার জন্য এসে ঘুরলেই ভালো হয়।

নিজের খাওয়া শেষ করে অরিন্দম অফিসে চলে গেল, যাওয়ার আগে আরেকবার সকালের কথাগুলো রিপিট করে বলে গেল। সারাদিন কাটিয়ে অয়ন্তিকা যেন হাঁফ ধরে গেল বসে বসে। অরিন্দম সরাসরি ওর সাথে কোনরকম এখনো কথা বলেনি।

______

দিনদশেক ধরে অয়ন্তিকার ঘুমিয়ে যাওয়ার পর অরিন্দম ফেরে বা ও ওঠার আগেই খেয়ে চলে যায়। অয়ন্তিকার মনে হলো যে কারণে যে জন্য আসা সেটাই আদৌও কিছু তেই মিটছে না।সেই তো দূরত্ব তৈরি হচ্ছে! শেষ পর্যন্ত ও ঠিক করলো দরকার হলে অরিন্দমের অফিসে গিয়ে বসে থাকবে তবুও এখানে থেকে বোর হওয়ার থেকে তো ভালো! এইরকম একদিন অরিন্দম বেরিয়ে যাওয়ার পর সেইদিন লাঞ্চ টাইম টা জেনে নিয়ে অফিসে এসে পৌঁছালো অয়ন্তিকা।

প্রথমে অফিসের গেটের দারোয়ানের কাছে এটা বোঝাতে সক্ষম হলো ও এখানের চেনা কেউ। তারপর ভিতরে ঢোকার পর ওর পরনের শাড়িটা দেখে বিভিন্ন রকম কথাবার্তা শেষে রিসেপশনে বলে সে বারকতক পা থেকে মাথা পর্যন্ত অয়ন্তিকার উপর নজর বুলিয়ে অপেক্ষা করতে বললো।

কিছুক্ষণ পর অরিন্দমের কাছে এখন যেতে পারবে বলে অয়ন্তিকাকে ওর কেবিন কোনদিকে দেখিয়ে দিয়ে চলে যাওয়ার পর, অয়ন্তিকা অরিন্দমের কেবিনের দরজাটা ফাঁক করে দেখলে অরিন্দম পিছন ঘুরে দাঁড়িয়ে আর ওকে ধরে গা ঘেঁষে একজন ঠিক নয় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

অয়ন্তিকা আর এগোলো না, পিছু হটে থেমে গেল ।ওকে এড়িয়ে যাওয়া ওর খোঁজ না নেওয়ার কারণ গুলো এবার পরিস্কার। ওখানে থেকে চলে আসার পর প্রথমদিন দেখা এয়ারপোর্টের মেয়েটার সাথে দেখা হতে ওর হাতে লাঞ্চ বক্স টা ধরিয়ে দিয়ে হনহনিয়ে চলে গেল।

কিছু তো হয়েছে ভেবেই মেয়েটা অরিন্দমের কেবিনে নক করে শুধু বললো,

স্যার ম্যাম এসেছিলেন কিন্তু খুব রেগে চলে গেলেন এক্ষুণি।

ওহ শিট! সুজ্যান তোমার সাথে পরে কথা হবে কিন্তু এই মুহূর্তে আমার খুব জরুরী কাজ আছে সো প্লিস লিভ বলেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে গেল। এদিকে অয়ন্তিকাকে লিফটের দরজার ভিতরে দেখে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অরিন্দম তাড়াহুড়ো করেই সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করলো। ওর একটকথাই মনে হচ্ছিল, অয়ন্তিকা প্লিস ভুল বোঝো না প্লিস।

একদম গ্রাউন্ড ফ্লোরে এসে দেখলো অয়ন্তিকা দরজা ঠেলে বেরিয়ে যাবে তার আগেই ওর হাতটা পিছনে থেকে কাউকে ধরে থাকতে বুঝতে পেরে অয়ন্তিকা দেখলো পিছনে ঘুরে অরিন্দম দাঁড়িয়ে রীতিমতো হাঁফাচ্ছে। কোনরকমে শুধু বললো,

দাঁড়া ও আমার কথাটা শোনো তুমি।

আচ্ছা শুনছি বলো ,এই যে দাঁড়িয়ে আছি তুমি দম নিয়ে নাও। (অয়ন্তিকা)

এখানে নয় আমার কেবিনে চলো, ওখানে বলছি সবার সামনে নয়। (অরিন্দম)

আচ্ছা বেশ, ওখানে যে আছে তার অসুবিধা হবে না তো নাকি সবার সামনে আমাকে পরিচয় দিতে লজ্জা করছে।

চলবে …

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top