Linksstories

linksstories` logo
snigdho valobasha

স্নিগ্ধ ভালবাসা পার্ট 1 | ইসলামিক লাভস্টোরি


আজানের সুমধুর ধ্বনি কর্ণপাত হতেই চোখ মেলে তাকালো শুদ্ধতা।তার চোখেমুখে ঘুমের রেশ এখনো স্পষ্ট বিদ্যমান তবুও কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে বসল সে।তারপর তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে ওযু করে নামায পরে নিল।নামাজ শেষে কোনআন তেলওয়াত করলো এক ঘন্টা। এটা তার নিত্যদিনের অভ্যাস।

(হাজি বাড়ির বড় মেয়ে শুদ্ধতা নাজরিন। তারা দু'বোন বড় শুদ্ধতা আর ছোট শুনিলা।শুদ্ধতা খুবই ভদ্র-সভ্য একটা মেয়ে।তার বাবা আমজাদ আলী মসজিদের ইমাম।তার মা ও হাজী বাড়ির সন্তান।শুদ্ধতা আর শুনিলা দুবোনই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে।কড়াকড়িভাবে পর্দা না করলেও যথেষ্ঠ সুশীলভাবে পর্দা করে তারা দু'বোন।তার মা অবশ্য পরিপূর্ণ পর্দাপন্থা অনুসরণ করেন)

কোরআন তেলওয়াত শেষে শুদ্ধতা কিছুসময় বই পরল।তারপর বই বন্ধ করে চলে গেল রান্না ঘরে সকালের নাস্তা বানানোর উদ্দেশ্যে।তারা মধ্যবিত্ত ফ্যামিলি তবে তাদের যা আছে এটা নিয়েই খুশি তারা।শুদ্ধতার মায়ের শরীর তেমন একটা ভালো না তাই আজকে ও নিজেই এসেছে নাস্তা তৈরি করতে।রান্নাঘরে গিয়ে কিছুটা আটা মেখে রুটি করে নিল।তারপর আলু কুচিকুচি করে কেটে ভাজি করল আর সাথে দুটো ডিম ভেজে নিয়ে নাস্তার টেবিল সাজিয়ে ফেলল।ইতিমধ্যেই সবাই নাস্তার টেবিলে হাজির।শুদ্ধতা সবাইকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিল।সবাই সুন্দরভাবে সালামের উত্তর দিয়ে টেবিলে বসল।তারপর শুদ্ধতা ওর মা, বাবা আর বোনকে উদ্দেশ্য করে বলল,,

_সকলের শরীর ভালো আছে তো।

সবাইকে হেসে উত্তর দিয়ে বলল,,সবাই ভালো আছে।শুদ্ধতার বাবা তখন তাকে পাল্টা প্রশ্ন করল,,সে ভালো আছে কী না। শুদ্ধতাও বাবার প্রশ্নের উত্তর খুব মার্জিত ভাবে দিল।তারপর সবাই মিলে এক সঙ্গে নাস্তা করতে বসল।নাস্তা চলাকালীন আর কোনো কথা কেউ বলল না কারণ খাবার সময় কথা বলতে নেই।যেহেতু তারা হাজী ফ্যামিলি তো প্রায় সবকিছুই তারা ইসলাম মোতাবেক করার চেষ্টা করে।

_ _ _ _ _

মিউজিক বাজিয়ে দরজা বন্ধ করে উড়াধুড়া ডান্স করছে অর্ণীল।বাবা মায়ের একমাত্র এবং অতি আদরে বিগড়ে যাওয়া কুপুত্র সে।কী আর করার পরিবার থেকে যে শিক্ষা পেয়েছে সেটাই লাইফে এপ্লাই করছে আরকি।সকল প্রকার বদমাইশিতে ডিগ্রি প্রাপ্ত। শুধু ডিগ্রি নয় একেবারে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট।কুকর্মের ওপর যদি পুরষ্কার দেওয়া হতো তাহলে সর্ব বৃহৎ পুরষ্কারটা নিসন্দেহে সেই পেত।কিন্তু তার জীবনের প্রয়োজনীয় খাতা একদমই শূন্য অর্থাৎ মুসলিম পরিবারের সন্তান হয়েও ইসলাম বিরোধী কাজই তার দ্বারা বেশি সাধন হয়। এছাড়া পড়াশুনায়ও জিরো ড্রিগি অর্জন করেছে।মোটকথা আধুনিকতার বেড়াজালে আবদ্ধ জীবনে পাপ ছাড়া পূন্যের কোনো স্হান নেই তার। সারাদিন ফ্রেন্ডস,পার্টি,ক্লাব, মারামারি, মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট এগুলোই তার লাইফ।

এক ঘন্টার মতো বাঁদর ডান্সের পর এবার সে টাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুম চলে গেল শাওয়ার নিতে। দীর্ঘ সময় যাবৎ শাওয়ার নেওয়ার পর হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বেডে গাঁ এলিয়ে দিল অর্ণীল।তাকে দেখে মনে হচ্ছে শাওয়ার নয় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে ফিরেছে।এতক্ষণ নিশ্চয়ই তার ওই বাঁদর ডান্স আর কাকের কন্ঠ বেষ্টিত গান ওয়াশরুমে ধুমধামের সহিত চলছিল যার ফলস্বরূপ তার এই পরিণতি।ক্লান্তিতে চোখ বুজে নিল অর্ণীল।কী ছেলেরে বাবা এখনো ওভাবেই টাওয়াল পরে শুয়ে আছে। লজ্জা শরমও মেবি ওকে দেখলে লজ্জা পেয়ে পালাবে জানালা দিয়ে।

হঠাৎই ভারি কিছু বুকের ওপর অনুভূত হওয়ায় চোখ খুলে তাকালো অর্ণীল। বিরক্তিতে তার কপাল কুচকে এলো মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো কিছু কটু বাক্য_,,

_আহহ জেসি তুমি কী বলো তো?দেখছো তো সবে মাত্র শাওয়ার নিয়ে এলাম এখনই কী তোমার বিরক্ত না করলে নয়।

জেসি অর্ণীলের বুকে মুখ গুজে দিয়ে বলল,,

_তোমাকে সকাল সকাল না জ্বালালে আমার দিনটা একদমই ভালো যায় না।তাই তো রোজ মর্নিংয়ে এখানে চলে আসি।

অর্ণীল বিরক্তির শ্বাস ফেলে জেসিকে ধাক্কা মেরে নিজের ওপর থেকে সরিয়ে দিল।তারপর তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল চেঞ্জ করতে।জেসি এখনো বেডে বসে আছে।অর্ণীল খুব ভালো করে জানে এই মেয়ের জন্ম বেহায়া লগ্নে, ওকে হাজার যেতে বললেও রুম থেকে যাবে না তাই নিজেই ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে চলে গেছে।

অর্ণীল বের হতেই জেসি অর্ণীলকে টেনে নিয়ে নিচে চলে গেল।দু'জনে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসল।ওখানে আগে থেকেই অর্ণীলের বাবা,মা ছিল।ওদের আগমনে অর্ণীলের মা শাহানা চৌধুরী বলে উঠল,,

_গুড মর্নিং... তোমরা এসে পরেছ।তোমাদের অপেক্ষাতেই ছিলাম।

জেসি,,গুড মর্নিং আন্টি,আঙ্কেল

শাফি চৌধুরী(অর্ণীলের বাবা),,গুড মর্নিং মামনি। কেমন আছো তুমি।

জেসি,,আই এম ফাইন আঙ্কেল

এদের কথার মাঝে অর্ণীল শুধু ছোট্ট করে গুড মর্নিং বলে খেতে আরম্ভ করল।খেতে খেতে সবাই নিজেদের মতো আলাপ-চারিতা চালিয়ে যাচ্ছে।অর্ণীলের খাওয়া শেষ হলে সে উঠে সবাইকে বাই বলে তাড়াতাড়ি চলে যাচ্ছিস জেসিও তখন তার বাকি খাবারটুকু ওভাবেই ফেলে রেখে অর্ণীলের পেছন পেছন ছুট লাগাল।এদের কান্ড দেখে অর্ণীলের বাবা হেসে দিয়ে বলল,,

_যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের এ্যাঙ্গেজমেন্ট টা সেরে ফেলতে হবে

শাহানা চৌধুরী,, হ্যাঁ আমি জেসির মমের সাথে কথা বলবো খুব শীঘ্রই

_ _ _ _ _

রিকশা নিয়ে মাদ্রাসায় পৌঁছে গেল শুদ্ধতা সাথে তার বোন শুনিলা ও আছে।আজকে নির্ঘাত কনিকা ম্যামের কাছে অনেক বকা খেতে হবে।অনেক লেট করে ফেলেছে কিন্তু ওদেরই বা কী করার ছিল রাস্তায় কতগুলো ছেলে মারামারি করছিল সেজন্য প্রচুর জ্যাম হয়েছিল আর তাই তো ওদের আসতে দেড়ি হলো।কিন্তু এই কথা ম্যামকে বোঝানো যাবে কী?ম্যাম যে টাইপের মানুষ কোনো এক্সকিউজ শুনবে না।সব ওই বজ্জাত ছেলেগুলোর জন্য। শুদ্ধতা রিকশার ফাঁক দিয়ে একজনের হাত দেখেছিল। হাতের কব্জির কাছে সুন্দর করে A বর্ণ ট্যাটু করা।আর কিছুই দেখেনি সে।এসব ভাবতে ভাবতে ক্লাসরুমের সামনে এসে ধমকে যায় শুদ্ধতা।শুনিলাকে নিজের ক্লাসে চলে যেতে বলে শুদ্ধতা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।তার ধারণাই ঠিক ম্যাম ক্লাসে চলে এসেছে।শুদ্ধতাকে নজরে পরতেই ম্যাম দরজার কাছে চলে এলেন। তিনি কিছুক্ষণ শুদ্ধতাকে পর্যবেক্ষণ করে বললেন,,

_কী ব্যাপার শুদ্ধতা এতো দেড়ি হলো কেন?তুমি তো দেড়ি করার মতো মেয়ে নও তাহলে?

শুদ্ধতা ভীতকন্ঠে জবাব দিল,,

_আসলে ম্যাম রাস্তায় মারামারি করছিল কিছু বখাটে যার জন্য জ্যামে রিকশা আটকে ছিল। তাই লেট হয়েছে।

শুদ্ধতার কথার পরিপেক্ষিতে ম্যাম বলল,,

_আজকের মতো ছেড়ে দিলাম নেক্সট টাইম এমন করলে ক্লাসের বাহিরে থাকতে হবে ক্লাস করা আর হবে না।

এই বলে ম্যাম চলে গেলেন ভেতরে।ম্যামের পেছনে শুদ্ধতাও ঢুকল ক্লাসে।আজ পুরো ক্লাসটা মন খারাপ নিয়েই পার করল শুদ্ধতা। সকাল সকাল ম্যামের কড়া কথা তার হজম করতে কষ্ট হচ্ছে বেশ।যার ফলে ওই গুন্ডাগুলোকে মনে মনে খুব করে বকে দিচ্ছে।

_ _ _ _ _

হাত দিয়ে বেগতিক রক্ত ছুটছে অর্ণীলের।কিছু বাজে ছেলেদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়েছিল সে।যদিও সে ইচ্ছে করে মারামারি করতে চাইনি ওই ছেলেগুলোই তাকে বাধ্য করেছে।জেসি ব্যান্ডজ করে দিচ্ছে অর্ণীলের হাতে আর এটা ওটা বলছে।অর্ণীল রাগী দৃষ্টি স্হাপন করে মেঝেতে চেয়ে আছে।

চলবে, 

Click Here To View Part 2

About The Author

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top