সকাল থেকে রান্নার তোড়জোড় চলছে শুদ্ধতাদের বাড়িতে। আজকে নাকি তার বাবার বন্ধু আসবে সাথে তার ফ্যামিলি।জন্মের পর থেকে তার বাবার কোনো ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে বলে জানা ছিল না শুদ্ধতার।কিন্তু হঠাৎই তার বাবা গতকাল রাতে বললেন তার এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে আর আজই সে তাদের বাড়িতে মিট করতে আসবে। হারানো বন্ধুকে ফিরে পেয়ে তার বাবা তো প্রচন্ড খুশি।নিজের সাধ্যের মধ্যে তাদের জন্য খাওয়া-দাওয়ার আয়োজনও করেছে। আর সেই জন্যই সকাল থেকে শুদ্ধতা আর ওর আম্মা রান্নার কাজে ব্যস্ত।
এদিকে অর্ণীলের মনে শুধু এক অদ্ভুত চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। গতকাল মারামারির এক পর্যায়ে সে রিকশায় গমনকৃত এক নারীর আঁখিপল্লবে নিজেকে বিলীন করে এসেছে।কী আছে ওই আঁখি জোড়ায় যা তাকে এতটা টানছে।ওই রমনীর আঁখিপল্লবের গভীরতা মাপতে গিয়েই তার হাতের ছুড়ির আঘাত পরেছে।বেখেয়ালি হওয়ার দরুন প্রতিপক্ষ তাকে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছে।বাড়িতে আসার পর থেকে সেই আঁখি জোড়া তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।সে না পারছে খেতে, না পারছে শুতে আর না পারছে কোনো কাজে মন বসাতে। মস্তিষ্কে শুধুই একই চিন্তাধারা অব্যাহত রয়েছে।
অর্ণীলের ভাবনার ছেদ ঘটল তার মায়ের ডাকে।তার মা খুব পরিপাটিভাবে নিজেকে সজ্জিত করে এসেছে। রুমে ঢুকতে ঢুকতে সে বলল,,
_অনি তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নেও তোমার বাবা আজকে তার কোন চাইল্ডহুড ফ্রেন্ডের বাড়িতে আমাদের নিয়ে যাবে
অর্ণীল বিরক্তিমাখা ফেস করে বলল,,
_প্লিজ মম তোমরা যাও না, আমাকে কেন এসবের মধ্যে টানছো?আমার এমনিতেই কিছু কাজ আছে সো আমি টাইম দিতে পারছি না
শাহানা চৌধুরী,, এসব তুমি কী বলছো? তোমার পাপা শুনলে খুব রেগে যাবে সো হারি আপ(Harry up)
অর্ণীল,,মম প্লিজ, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড
শাহানা চৌধুরী,,No no no don’t talk
শাহানা চৌধুরী অর্ণীলকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।অর্ণীল রাগে হাত মুঠো করে দেওয়ালে একটা জোর ঘুষি মেরে দিল।তারপর হনহন করতে করতে ওয়াশরুম গিয়ে তৈরি হয়ে নিল।
_ _ _ _ _
ছোট্ট একটা গলির মাথায় এসে অর্ণীলদের গাড়ি থামল।শাফি চৌধুরী অর্নীল আর শাহানা চৌধুরীকে গাড়ি থেকে নামতে বললেন। দুজনেই শাফি চৌধুরীর কথায় চরম অবাক।এখন নেমে কী করবে সেটা তাদের বোধগম্য হলো না।তবুও কোনো প্রকার বাক্যব্যয় না করেই দুজনেই নেমে পরলেন।শাফি চৌধুরী স্ত্রী, পুত্রকে নিয়ে গলির ভেতর গমন করলেন। শাহানা চৌধুরী আর অর্ণীল প্রচুর বিরক্ত হচ্ছে এমন একটা অদ্ভুত পরিবেশের সাথে তারা একদমই এডজাস্ট করতে পারছে না বা চাইছে না।গলির মধ্যে অনেক দুর যেতেই চোখে পরল একটা মসজিদ। মসজিদের গাঁ ঘেঁষেই দাঁড়িয়ে আছে একতলা বিশিষ্ট একটি ইটের তৈরিকৃত বাড়ি।শাফি চৌধুরী বাড়িটি দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলেন।তারপর স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে ঢুকে পরলেন বাড়ির ভেতরে।বাড়ির মধ্যে ঢুকতেই শুদ্ধতার বাবা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এলো বন্ধুর নিকট। তারপর দুই বন্ধু কোলাকুলি করে কুশলাদি বিনিময়ের পর্ব শেষ করলেন।শুদ্ধতার বাবার সাথে শাফি চৌধুরী নিজের স্ত্রী, পুত্রের সাক্ষাৎ করিয়ে দিলেন।সকলে মিলে ড্রইং রুমে বসলো।আলাপ -আলোচনার এক পর্যায়ে শুদ্ধতার মা মেহমানদের জন্য নাস্তা নিয়ে
এলেন।তারপর তিনিও সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে নিলেন।
নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের বিলাসিতার মতো সুবিধা এখানে না পাওয়ায় খুব অসুবিধা হচ্ছে অর্ণীলের। এই মিডেল ক্লাস সোসাইটিতে তার মুহূর্ত যেন কাটতেই চাইছে না। খুবই কষ্ট হচ্ছে সাথে রাগও।তার বাবাটা এমন কেন?সবসময় নিজের মত অন্যের ওপর চাপিয়ে দেয় এই অভ্যাসটা অর্ণীলের খুবই বিরক্ত লাগে।অর্ণীলের ভাবনার ছেদ পরে তার বাবার বলা বাক্যে।তার বাবা তার বন্ধুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,
_কী রে আমজাদ তোর মেয়েরা কোথায় তাদের সাথে পরিচয় করাবি না?
আমজাদ সাহেব হেসে জবাব দিলেন,,
_হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই করাবো।শুদ্ধতার আম্মা মেয়েদেরকে এখানে নিয়ে এসো তো।
শরিফা বেগম,,জ্বী আনছি
সালামের শব্দে সবাই সামনে ফিরে তাকালো।উপস্থিত সবাই সালামের উত্তর দিল।শুদ্ধতা আর শুনিলা দুবোনই সুন্দর করে মুখ ঢেকে এসেছে।বেগানা পুরুষের সামনে তারা মুখ খুলে উপস্থিত হতে চায়নি।শাফি চৌধুরী আর শাহানা চৌধুরী ওদের দুবোনের সাথে সাক্ষাৎ সেড়ে নিল।তারপর দুবোন বড়দের থেকে পারমিশন নিয়ে ভেতরে চলে গেল।
এদিকে অর্ণীলের চোখের পলক এখনো স্তব্ধ। গতকালের সাথে এই চোখ একেবারে সাদৃশ্যপূর্ণ।এই তো সেই মায়াবতী।এত তাড়াতাড়ি এই চোখের মালিকের দেখা মিলবে এটা সে ভাবেনি।মনে মনে এখন সে তার বাবাকে একশো টা থ্যাংকিউ দিচ্ছে এখানে নিয়ে আসার জন্য।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পরপরই শাফি চৌধুরী তার ফ্যামিলি নিয়ে চলে যান। আর একই সাথে আমজাদ সাহেবকেও তার পরিবার সমেত তাদের বাসায় ইনভাইট করেন।পুরোটা সময় অর্ণীল শুধু শুদ্ধতাকে খুঁজেছে কিন্তু শুদ্ধতা আর তাদের সামনে আসে নি।
_ _ _ _ _
জানালার গ্রিল ঘেঁষে বসে আছে শুদ্ধতা। দৃষ্টি তার সুদূর চন্দ্রের ন্যায়।আজ পূর্ণিমা হওয়ায় আকাশে থালার মতো বিশাল আকৃতির চাঁদ ভাসমান। শুদ্ধতা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে আছে চাঁদপানে।চোখের যেন পলকই পরতে চাইছে না তার।