“আমি না এই রুমে থাকতে চাই।
” হোয়াট..?
এই কথা বলে আইরিন দাঁড়ায় নি। এক দৌড়ে রুম থেকে পালিয়ে যায়। এক দৌড়ে গিয়ে নিজের রুমে এসে থামে।সিজান ভ্রূ কুঁচকে আইরিনের দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
” পাগল নাকি মেয়েটা.?.
আইরিন নিজের রুমে এসে একা একাই বিরবির করছে,
” আইরিন তোর লজ্জা শরম একেবারে উঠে যাচ্ছে। মুখে যা আসে তাই বলে দিচ্ছিস। কী ভাবে বলতে পারলি? আমি আপনার এই রুমে থাকতে চাই। বাহ তোর সাহসের সুনাম করতে হয়।
সন্ধ্যার পর সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসে। কাজের মেয়েটার পাশাপাশি, আইরিনও হেল্প করে নাস্তা সার্ভ করতে। তা দেখে জাহানারা চৌধুরী,
” আরে মেয়ে তুমি এইসব না করে, বসে পড়ো তো।
” না আন্টি সমস্যা নেই, আমার ভালোই লাগছে করতে।
” পাগলী মেয়ে একটা।
” আসলেই পাগল.. (সিজান বিরবির করে)
” সিজান কিছু বললি.?
” না না আমি আবার কী বলবো?
” আমি শুনেছি আন্টি,উনি কী বলল।
” বল তো দেখি, কী বলছে ও.?
” উনি আমাকে পাগল বলছে।
” সিজান, সত্যি নাকি? তুই ওকে পাগল বলেছিস?
” না না আমি ওকে কেনো পাগল বলতে যাবো? ও তো পাগল না পাগলী।
” পাগলী ঠিকাছে। সেটা আমি আদর করে বলবো। তুই কেনো বলবি.?
” আমিও আদর করেই বলছি।
” তুই কেনো আদর করে বলবি?
” ওমা তুমি বলতে পারলে, আমি বলতে পারব না.?
” না তুই বলতে পারবি না। মা যা বলতে পারে, ছেলে তা বলতে পারে না।
” একদম ঠিক বলছেন আন্টি। আবার আপনার মুখে মুখে তর্ক করে।
আইরিনের কথা শুনে সিজান চোখ গরম করে আইরিনের দিকে তাকায়।
” দেখেন কেমন করে তাকায় আমার দিকে?
আইরিনের কথা শুনে সিজান ভ্যাবাচেকা খায়। এই মেয়ে দেখি সব কিছুই আম্মার সামনে বলে দিচ্ছে।
” কি বিচ্ছু মেয়েটা। অথচ দেখতে কতো সহজ সরল মনে হয়। (মনে মনে)
সিজান আইরিনের থেকে চোখ সরিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। আইরিন মুচকি হাসে।
” এবার বুঝো মজা। (আইরিন মনে)
সিজান ছাদে বসে গিটারে টুংটাং আওয়াজ তুলছে।
আইরিন, সিজানকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে আসে। এসে দেখে সিজান গিটারে সুর তোলার চেষ্টা করছে। আইরিন গুটি গুটি পায়ে হেটে এসে সিজানের পাশে দাঁড়ায়।সিজান গিটারে খুব সুন্দর সুর তুলছে। আইরিন চুপ করে দাঁড়িয়ে শুনছে। আইরিন যে কখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছ সিজান টের’ই পায়নি।
সিজান সুর তোলা শেষ হলে সে পাশে গিটার রাখতেই আইরিনকে দেখতে পায়।
” তুমি এখানে.?
” হ্যাঁ আমি।
” কখন এলো?
” অনেক্ষন হলো। কিন্তু আপনি গিটারে সুর তুলতে মগ্ন ছিলেন যে আমি যে আপনার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি আপনি টের’ই পান নি।
” ওহ আচ্ছা।
” হুম। আপনি কিন্তু গিটারে সুন্দর সুর তুলেন। আমার কাছে ভালো লেগেছে।
” ধন্যবাদ।
” ওয়েলকাম(হেসে)
” আপনি নিশ্চয় গান গাইতে পারেন? একটা গান শোনান না।
” আরেকদিন…
” আরেকদিনও শুনবো। তবে এখন খুব শুনতে ইচ্ছে করছে।
” আচ্ছা তাহলে তো শুনাতেই হয়।
” হুম।(খুশি হয়ে)
সিজান গিটার টা আবার হাতে নেয়। সুর তুলে সে সুরের তালে গান গাওয়ার চেষ্টা করে।
‘ কেনো রোদের মতো হাসলে না,
আমায় ভালোবাসলে না,
আমার কাছে দিন ফুরালেও
আসলে না।
এই মন কেমনের জন্মদিন
চুপ করে থাকা কঠিন,
তোমার কাছে ক্ষর স্রোতাও
গতিহীন।
নতুন সকালগুলো কপালছুঁলো তোমারই,
দূরে গেলেও এটাই সত্যি তুমি আমারিই.
শুধু আমারিই..।
সিজান গান গাওয়া শেষ করলে আইরিন হেসে হাত তালি দেয়।
” সুন্দর সুন্দর।অনেক সুন্দর হয়েছে।
” ধন্যবাদ। (হেসে)।
” আচ্ছা আপনার আকাশ ভালো লাগে.?
” ঠিক আকাশ ভালো লাগে না। তবে রাতে খোলা আকাশের নিচে বসে গিটারে আওয়াজ তুলতে ভালো লাগে।
” জানেন আমার না অনেক শখ, আমি রাতে খোলা আকাশের নিচে প্রিয় মানুষের হাত ধরে রাস্তায় হাটবো। কিছু পথ যাওয়ার পর আমি যখন বলবো, আমার পা ব্যাথা করছে। তখন সে আমাকে কোলে নিয়ে হাটবে।
” বাহ খুবি রোমাঞ্চকর শখ। বিয়ে করে নিলেই তো হয়। প্রিয় মানুষও পেয়ে যাবে।
” প্রিয় মানুষ তো আছে। কিন্তু সে তো পাত্তা দিচ্ছে না।
” আচ্ছা এখন উঠি, চলো।(কথা এড়ানোর ভান করে)
আইরিনও বুঝে যায়। সিজান কথা এড়ানোর জন্য কথায়া বলল, তাই সেও উঠে পড়লো।
” ও আল্লাহ! কবে যে সে বুঝবে আমাকে। একটা মেয়ে পিছনে ঘুরছে, আর ছেলেটা পাত্তাই দিচ্ছে না।
এতো ভাব কীসের হ্যাঁ?
চলবে..
~ ইমতিহান ইমরান।