আর এইদিকে আইরিনের কাজিনেরা এসে আইরিনকে সাজিয়ে দিতে থাকে। হলুদ শাড়ি, মাথায় টুকলি, হলুদ চুড়ি পড়িয়ে সাজিয়ে দেয়। সাজানো শেষ হলে আইরিনকে নিয়ে গিয়ে স্টেজে বসায়। অবশ্য আইরিন স্টেজে বসার আগে, তার হবু জামাইয়ের ফোনে পিক সেন্ড করতে ভুলেনি।
আইরিনকে স্টেজে বসানো হলো, আইরিনের মা-বাবা এসে আইরিনের হাতে, মুখে হলুদ মাখিয়ে দিয়ে যায়। মেয়েকে তারা আর্শিবাদও করে দিয়ে যায়। মা-বাবার হলুদ দেওয়া শেষ হলে তার ভাই-ভাবী এসে তাকে হলুদ মেখে দেয়।
” স্বামী নিয়ে সুখে শান্তিতে ঘর করো ননদিনী।
সবার হলুদ দেওয়া শেষ হলো, গান বাজনার আয়োজন করা হয়। প্রথমেই কনেকে দিয়ে গান বাজনার সূচনা হয়। আইরিনই সবার প্রথমে স্টেজে এসে নাচের প্রোগ্রাম আরম্ভ করে।
তারপর একজন একজন করে কাজিনেরা এসে নেচে যায়। আইরিনের ভাই-ভাবীও কাপল ডান্স দিতে মিস করেনি।
প্রোগ্রাম শেষ করলে আইরিন রুমে আসে। ফ্রেশ হয়ে হাতে মোবাইল নিতেই দেখে সিজানের কয়েকটা কল এসে স্ক্রিনের উপর এসে হাজির।
আইরিন ফোন দেওয়ার আগে মোবাইলে ধারণ করা তার নাচের ভিডিওটা সিজানের মোবাইলে সেন্ড করে।
তারপর একটা কল দেয়। রিং বাজে, কেউ ধরে না। আইরিনও আর কল দেয়নি। সিজানের ফোনের অপেক্ষায় বসে থাকে।
কিছুক্ষণ পর আইরিনের ফোন বেজে উঠে। আইরিন সাথে সাথেই রিসিভ করে।
” মনে করেছিলাম। কল করব না।।
” ওমা, কেনো কেনো?
” কেনো কেনো, বুঝো না মনে হয়? কয়টা কল দিয়েছি, হ্যাঁ? রিসিভ করার নাম গন্ধও দেখি না।
” নিচে ছিলাম। অনুষ্ঠান চলছিল। মোবাইল রুমে রেখে গিয়েছি।
” তাহলে তো আরো বড় অপরাধ করেছো। তুমি জানো আমি কল দিবো। তারপরেও তুমি মোবাইল রেখে গেছে। যাও তোমার সাথে আড়ি দিলাম।
” এখন আড়ি দিলে, কালকে কিন্তু বাসর করা মিস হয়ে যাবে। তখন কিন্তু আমার দোষ দিতে পারবেন না।
” সেটা হবে না। আড়ি দিলেও বাসর করা আমার মিস হবে না। ভেবো না তুমি বেঁচে যাবে।
” ওমা, তাহলে এটা কেমন আড়ি হলো? যেরকম আড়িই হোক, বাসর করা আমি ছাড়ছি না।
” খুব লুচু তো আপনি।
” লুচু কেনো হবো? নিজের বিয়ে করা বউয়ের সাথে বাসর করবো বলছি, অন্য কারো সাথে করবো, বলিনি।
” নিজের বউয়ের সাথে হলেও তো সেই লুচু কাজই করবেন।।
” তুমি তো দেখছি ভারী ফাজিল মেয়ে।
” হাহাহিহিহি।
” আবার হাসে?
” হাসবো না? তো কি কান্না করবো? বিয়ের কনের কালকে বিয়ে, আজকে সে কান্না করবে?
” না, হেসে লুটিপুটি খাও।
” আচ্ছা এইবার বলেন খাইয়া দাওয়া করেছেন?।
” হুম। তুমি?
” করেছি। আচ্ছা শুয়ে পড়ুন। আমিও শুয়ে পড়ি। কালকে আবার অনেক কিছু যাবে আমার উপর দিয়ে।
” আচ্ছা আচ্ছা। শুভ রাত্রি।
” শুভ রাত্রি।
!!..
!!¡
বিয়ের দিন

আইরিনকে বিয়ের গোসল করিয়ে সাজুগুজু করিয়ে রেডি করিয়ে দেওয়া হলো। সিজান আজকে আর ফোন দেয়নি। তার কাছে ছবিও চায়নি। অবশ্য ভালো করেছে। একেবারে তাকে সামনাসামনি দেখে কী রিয়েকশন দেয়, সেটাই দেখার।
এইদিকে সিজানও রেডি হচ্ছে বরের সাজে। সে মনে মনে ঠিক করেছে একেবারে সামনা সামনি আইরিনকে দেখবে, তার বউকে দেখবে। আর সেলফিতে নয়। তাই সে আজকে আর আইরিনের সাথে যোগাযোগ করেনি।
যথা সময়ে বিয়ে বাড়িতে এসে উপস্থিত হয় বরের ছোট্ট বাহন রিক্সা। কারন সবাই জানে আইরিনদের বাড়ির সামনে সরু রাস্তায় রিক্সা ছাডা অন্যান্য যানবাহন প্রবেশ করার ব্যবস্থা নেই।
কনের কাজিনেরা এসে গেইটে দাঁড়ায়। তারা বরের কাছে বিশ হাজার টাকা দাবি করে। তানা হলে তারা বরকে ভিতরে ঢুকতে দিবে না। বরের কাজিনেরাও বলল এটা কি মামা বাড়ির আবদার? তারা এতো টাকা দিতে পারবে না। কনের কাজিনেরাও নাছোড়বান্দা তারা টাকা ছাড়া গেইট ছাড়ছে না। বরকেওও ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে। অনেক্ষন ঝগড়া ঝাটি করে তাদের দশ হাজার টাকায় রাজি করানো গেলো।
টাকা দেওয়া নেওয়া শেষ হলে বরকে মিষ্টি, শরবত খাইয়ে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হলো। তার জন্য রাখা নির্ধারিত স্টেজে তাকে বসানো হলো। মানুষজন এসে বরের সাথে বিভিন্ন পোজে ছবি তুলে নিচ্ছে।
সিজানকে লক্ষী বরের মতো চুপচাপ সব সহ্য করে যেতে হচ্ছে।আর ভাবছে কখন তার সামনে আইরিনকে আনা হবে? কখন সে আইরিনকে দেখতে পারবে।অপেক্ষা করছে সে।
অবশেষে সিজানের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। বউকে নিয়ে এসে তার পাশের আসনে বসিয়ে দেওয়া হলো। কনেরা কাজিনেরা একটা আয়না, সিজানের হাতে ধরিয়ে দেয়। কনের দিকে মুখ করে আয়না ধরে, সিজানকে বলে,
” কী দেখতে পাচ্ছেন দুলাভাই?
” আমার সুন্দরী বউকে, মাসাল্লাহ। ” সিজান বলল।
” ওয়াওওঅঅঅঅঅঅ.। ” সবাই সমস্বরে বলে উঠে।
আয়নায় আইরিনকে দেখে সিজান মুগ্ধ হয়। অনেক সুন্দরী লাগছে আইরিনকে। কারো যেনো নজর না লাগে তার বউয়ের উপর, “মনে মনে সে বলল।
এইদিকে সিজানের কমেন্ট শুনে আইরিন মুচকি হাসে।
অবশেষে তিনবার কবুক বলে আইরিন হবু বউ থেকে সিজানের পার্মানেন্ট বউ হয়ে যায়।
চলবে….(রোমান্টিক মুহূর্ত আসতেছে)