আইরিনও বুঝে যায়। সিজান কথা এড়ানোর জন্য কথায়া বলল, তাই সেও উঠে পড়লো।
” ও আল্লাহ! কবে যে সে বুঝবে আমাকে। একটা মেয়ে পিছনে ঘুরছে, আর ছেলেটা পাত্তাই দিচ্ছে না।
সকালবেলা,
সিজানের চোখে মুখে পানির ছিটা পড়তেই সিজান ধড়পড়িয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়ে। চোখ মেলে সামনে তাকাতেই খেয়াল করে,আইরিন হেসে পানির গ্লাস হাতে দাঁড়িয়ে আছে। সিজান বুঝে যায়, এই মেয়েটাই তার চোখে মুখে পানি মেরেছে।
” আইরিন সমস্যা কী? পানি মারলে কেনো? ঘুমাচ্ছিলাম, চোখে দেখো নাই?
” দেখেছি বলেই তো পানি মেরেছি। কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে আপনার?
” যতোটা বাজুক, তা নিয়ে আমার মাথা ব্যাথা নেই। তুমি আমার মুখে পানি মারলে কেনো? সেটা বলো।
” আন্টি বলেছে আপনাকে ডাকতে। কিন্তু আপনাকে ডাকার পরেও আপনি উঠছিলেন না। উঁ আঁ করছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে পানি মারতে হলো।
” তাই বলে তুমি পানি মারবে? আক্কেল জ্ঞান নাই তোমার?
” সব আছে আমার। এখন কথা না বলে তাড়াতাড়ি উঠুন। আন্টি নাস্তা নিয়ে বসে আছে।
” আম্মা জানে আজকে বন্ধের দিন তার ছেলে কখন ঘুম থেকে উঠে। সো তিনি নাস্তা নিয়ে বসে থাকবে না। অযোথা প্যারা না দিয়ে ফুটো। ঘুমাবো আমি।
সিজান আবার বালিশে মাথা রাখে।
” আরে সত্যি, আন্টি নাস্তা নিয়ে বসে আছে। আপনি গিয়ে একবার দেখেন, আমার কথা বিশ্বাস না হলে।
সিজান জবাব না দিয়ে শুয়েই থাকে চোখ বন্ধ করে।
আইরিন আবারও ইমরানের মুখে পানি ছুঁড়ে মারে।
” তোমারে আমি…
সিজান লাফিয়ে উঠে আইরিনকে তাড়া করতে থাকে।
” ওরে আমি পালাই।।
সিজান, আইরিনকে ধরার জন্য ছুটছে। আইরিনও দৌড়াচ্ছে। আইরিন দৌড়াতে দৌড়াতে নিচে নেমে আসে। এসে আন্টির পিছনে লুকিয়ে পড়ে।
” আইরিন সামনে এসে। তোমাকে আমি…
” দেখেন না আন্টি, আপনার ছেলে আমাকে মারতে তাড়া করছে।
” সিজান এইসব কী?
” আম্মা এই মেয়েটা আমার মুখে পানি ছুড়ে মেরেছে। ওকে আমি পানিতে চুবিয়ে মারমো।
” আন্টি আপনার ছেলে গরুর মতো ঘুমায়। কতোবার ডাকছিলাম, উঠছিল না। তাই পানি মারতে হলো।
” একেবারে ঠিক কাজ করেছিস। এতোক্ষণ কেউ ঘুমায় নাকি? কিন্তু এই ছেলেটার সময় জ্ঞান নাই, সে ঘুমাতেই থাকে।
” আম্মা তুমি সবসময় ওর পক্ষ নেও। তুমি জানো না? আমি বন্ধের দিন ঘুমাই।
” অভ্যাস পাল্টা। এই অভ্যাস ভালো না।
” আমি কেনো অভ্যাস পাল্টাবো? একদিনই তো ঘুম যাই।
” হইছে এখন তর্ক না করে, ফ্রেশ হয়ে আয়। কতোক্ষন অপেক্ষা করছি।
” যাচ্ছি যাচ্ছি। এই মেয়েকে আমি পরে দেখে নিবো।
কথাটা শুনে ফারিন জিব্বা দেখিয়ে সিজানকে ভেংচি মারে। সিজান মারতে আসলে আইরিন,,
” আন্টি….
” সিজান..
” যাচ্ছি যাচ্ছি।
আইরিন হেসে দেয়।
সিজান ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে আসে। আইরিন নাস্তা সার্ভ করে দেয়।
” সিজান তোর তো আজকে কোনো কাজ নেই। ফারিনকে একটু ঢাকা শহর টা ঘুরে দেখিয়ে নিয়ে আয়।
” অনেক কাজ আছে আম্মা।
” কী কাজ আছে, শুনি.?
” আন্টি থাক সমস্যা নেই। উনাকে যেতে হবে না। আমি বাইরে যাবো না। (মন খারাপ করে)
আইরিন চুপচাপ খাচ্ছে। যেটা দেখতে সিজানের কাছে ভালো লাগছে না। তাই সে বলল,
” আমি তো ভাবছি কাউকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাবো। কিন্তু এখন যদি সে না যেতে চাই। তাহলে আমার আর কী করার। ওকে না যেতে চাইলে থাক।
কথাটা শুনে আইরিন জোরে বলে উঠে,
” না না আমি যাবো। যাবো তো আমি।
আইরিনের বলার ধরন দেখে সিজানের আম্মা ও সিজান দুজনেই হেসে উঠে।
!¡
আকাশের আজকে মন খারাপ। তাইতো আকাশের মেঘের কোলে রোদ হাসেনি। আবহাওয়া মেঘলা হয়ে আছে। এই মেঘলা আবহাওয়া বিরাজ করলেও সিজান, আইরিনকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে। অবশ্য সিজান একবার বলেছিল, বৃষ্টি নামবে হয়তো। আজকে না গেলে হয় না.?
আইরিনও নাছোড়বান্দা সে সুযোগ যেহেতু পেয়েছে আজকেই যাবে। দুজনে রিক্সায় উঠে বসে। রিক্সা চলছে গন্তব্যে। কিছুটা পথ অতিক্রম করার পর সিজান, আইরিনকে নিয়ে রিক্সা থেকে নেমে নদীর ঘাটে যায়। জায়গা টা অনেক সুন্দর। সিজান প্রায় সময়ে ই জায়গায় আছে। নদীর মাঝখানে ছোট্ট একটা রিসোর্ট বানানো হয়েছে। সিজান, আইরিনকে নিয়ে লোহা দিয়ে বানানো সেতু অতিক্রম করে রিসোর্টে পা রাখে।।
” ওয়াও। অনেক সুন্দর জায়গা এটা। আমার খুব ভালো লেগেছে।।
” আমারও জায়গাটা খুব ভালো লাগে।
” আপনি আরো এসেছেন.?
” হুম প্রায় আসি।
” একলা একলা আসেন তো.? নাকি কোনো মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।(ভ্রূ কুচকে)
” আরে এভাবে ভ্রূ উপর নিচ করছো কেনো? একলাই আসি। মেয়ে নিয়ে আসবো কেনো? আর আসলেও তোমার সমস্যা কী?
” আমার সমস্যা কী বুঝেন না আপনি? নাকি না বুঝার ভান করে থাকেন।
” না আমি কিছু বুঝি না।
” উফ! আপনার সাথে এই সুন্দর জায়গায় এসে ঝগড়া করে আমার মুড নষ্ট করতে চাই না।
” মনে হয় আমি খুব চাই।
আইরিন রেগে সিজানকে মারার ভঙ্গি করে।
” আরে মারবে নাকি?
” মারবো না। এখান থেকে এই নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।
” আমি সাঁতার পারি।
চলবে….