উফ! আপনার সাথে এই সুন্দর জায়গায় এসে ঝগড়া করে আমার মুড নষ্ট করতে চাই না।
” মনে হয় আমি খুব চাই।
আইরিন রেগে সিজানকে মারার ভঙ্গি করে।
” আরে মারবে নাকি?
” মারবো না। এখান থেকে এই নদীতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো।
” আমি সাঁতার পারি।
” উফ..আমি বাসায় গিয়ে আন্টির কাছে আপনার নামে বিচার দিবো।
” কী বিচার দিবা.?
” বলবো আন্টি আপনার ছেলে একটা ঝগরুটে। কথায় কথায় মেয়েদের মতো ঝগড়া করে। আমাকে ঘুরতে নিয়ে যায় নি।।নিয়ে গেছে ঝগড়া করার জন্য।
” আমি কথা বললে যেহেতু ঝগড়া হয়ে যায়। তাহলে আর কথাই বলব না। এইতো চুপ করলাম।
” কথা আর ঝগড়া বিস্তর ফারাখ।
সিজান কিছু বলল না। আইরিনও চুপ হয়ে সৌন্দর্য্য উপভোগ করছে। এমনসময় আকাশের বুক ছিদ্র হয়ে বৃষ্টি নামল।
” ওয়াও বৃষ্টি..।
আইরিন দিলো এক দৌড় সেতু দিয়ে।
” আরে এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে কোথায় যাচ্ছো?
আইরিন এক দৌড়ে পাড়ে নেমে বৃষ্টিতে ভিজতে লাগল। আইরিনের কান্ড দেখে সিজান অবাক না হয়ে পারে না। এই মেয়ে বাচ্চা নাকি? বুঝে না কখন কী করতে হয়? এতো মানুষ রয়েছে এখানে, সবার সামনে কীভাবে লাফালাফি করছে। সিজান দৌড়ে গিয়ে আইরিনের সামনে দাঁড়ায়। নিজের কোর্ট টা খুলে আইরিন কে পড়িয়ে দেয়।
” এই মেয়ে পাগল নাকি তুমি.? কোথায় কী করতে হয়, সেটাও বুঝে না।
” বুঝার কী আছে? বৃষ্টি আমার ভালো লাগে তাই ভিজছি।
” মাথায় গিলু থাকলে বুঝতে,বুঝার কী আছে? এখানে কি তুমি একা আছো? এখানে অনেক মানুষ রয়েছে। তুমি যে একটা মেয়ে লাফালাফি করছো? সবাই কীভাবে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে, খেয়াল আছে তোমার? (ধমক দিয়ে)
সিজানের কথা শুনে আইরিন চারিপাশে তাকায়। সত্যি তো মানুষ জন তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আইরিন এবার লজ্জা পায়। সে কী বলবে বুঝতে পারছে না।
আইরিন মাথা নিচু করে বলে,
” সরি।
” আসো। এখন যাই।
” হু।
সিজান, আইরিনকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। আর কোথাও ঘুরা হয়নি তাদের। আইরিন তার বোকামির জন্য নিজেকে নিজে গালাগালি দেয়।
” গাধা আইরিন একটা। কোন বুদ্ধি, আক্কেল কিছুই নেই তোর। কোথায় কী করতে হয়? কিছুই জানিস না তুই। গাধা মেয়ে একটা।
!!
সন্ধায়, সিজানকে খুঁজতে খুঁজতে আইরিন ছাদে চলে আসে। ছাদে এসে সিজানকে পেয়ে যায়।
সিজানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরিন নিজের উপস্থিতি বুঝানোর জন্য কাশি দেয়।
” উহুম উহুম।
উহুম উহুম আওয়াজ শুনে সিজানের মনোযোগ চলে আসে আইরিনের দিকে।
” আজকের দিনের ঘটনার জন্য আমি সরি।
” তখন একবার সরি বললে তো।
” এই একবার সরি দিয়ে হয় না। অনেকবার বলতে হবে।
” একবার সরি দিয়েই হয়। অনেকবার বলতে হবে না।
তারপর দুজনেই নিশ্চুপ। নিরবতা ভাঙে আইরিন।
” একটা কথা বলি.?
” হুম বলো।
” অন্য কোনো মেয়ের সাথে প্রেম করিয়েন না। অন্য কোনো মেয়ের কাছে যাইয়েন না। সবসময় মনে রাখবেন একটা মেয়ে আপনাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। সেই মেয়েটার নাম হচ্ছে আইরিন।
আইরিন কথা গুলো বলো এক দৌড়ে ছাদ থেকে নেমে যায়। সিজান হা করে তাকিয়ে আছে।
” একটা কথা বলতে গিয়ে এই মেয়েটা দেখি অনেকগুলো কথা বলে গিয়েছে।
!¡!
পরেরদিন আয়ান আসে আইরিনকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
” আয়ান,মেয়েটা আরো কয়েকদিন থাকুক না এখানে। এতো তাড়া কীসের? নাকি আমাদের আপ্যায়ন ঠিক হচ্ছে না, হ্যাঁ?
” ছি! ছি! আন্টি। এইসব কী বলছেন? আপনি তো আমাদের নিজের ছেলে মেয়েই ভাবে। এখানে আপ্যায়নের প্রশ্নই উঠে না।
” তাহলে কেনো নিয়ে যাচ্ছো.?
” অনেকদিন তো হলো। আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি,তাই ওকেও নিয়ে যাচ্ছি।
দুজনের কথার মাঝে আইরিন ব্যাগ নিয়ে এসে হাজির। আইরিন এসে সিজানেত আম্মুকে জড়িয়ে ধরে।
” ভালো থাকবেন আন্টি। অনেক মিস করবো আপনাকে।
” আমিও এই মিষ্টি মেয়েটাকে অনেক মিস করবো।
আইরিন, বিদায় নিয়ে বের হয়ে যায়। সিজানের সাথে দেখা হয়নি। সিজান ঘুমে ছিল,তাই তাকে আর জাগায়নি।
“
সিজান ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে এসে এদিক ওদিক তাকায়। কোথাও আইরিনকে দেখছে না। আম্মাকে,আইরিনের কথা জিজ্ঞেস করতেও পারছে না। উনি কি না কি ভাবে?
সিজান বুঝতে পারছে ন,তার আম্মাও কেনো আজকে আইরিনকে খুঁজছে না।সিজান আর জিজ্ঞেস না করতে থাকতে পারেনি।
” আম্মা, ওই মেয়েটাকে দেখছি না যে? ও ব্রেকফাস্ট করবে না।
” কোন মেয়েটা?
” আরে আয়ানের বোন।
” ও তো চলে গেছে।
” চলে গেছে মানে? কোথায় গেছে?
” আয়ান এসে নিয়ে গেছে। তুই তো ঘুমে ছিলি,তাই তোকে ডিস্টার্ব করতে চায়নি।
” ঘুমে ছিলাম। তাই, বলে যাবে না.?
” হুম।
সিজান চুপচাপ খেয়ে উঠে যায়।নিজের রুমে গিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়। হঠাৎ টেবিলের উপর নজর যেতেই দেখে একটা কাগজ।
সিজান কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে,
” ভালো থাকবেন। আর হ্যাঁ আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করবেন। ভালোবাসি আপনাকে।
চলবে…