সিজান চুপচাপ খেয়ে উঠে যায়।নিজের রুমে গিয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়। হঠাৎ টেবিলের উপর নজর যেতেই দেখে একটা কাগজ।
সিজান কাগজ টা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে,
” ভালো থাকবেন। আর হ্যাঁ আমাকে ভালোবাসার চেষ্টা করবেন। ভালোবাসি আপনাকে।
সিজান কাগজ টা নিয়ে নিজের ওয়ালেটে রাখে। সিজান অফিসে যায়। অফিসে তার মন বসছিল না।
বারবার আইরিনের কথা মনে পড়ছিল। বাসায় গেলে তাকে আর দেখবে না, তার দুষ্টামি দেখবে না।
সিজান আইরিনকে মিস করতে শুরু করে দিয়েছে।
সিজানেত অফিসে ভালো লাগছিল না দেখে, সে নদীর ধারে আসে। যেখানে গতকাল আইরিনকে নিয়ে আসছিল।গত কালকের কথা মনে পড়ে সিজানের হঠাৎ হাসি পেলে। কি বাচ্চামো না সে করেছিল। বৃষ্টি আসতে দৌড়ে গিয়ে ভিজতে শুরু করলো। লাফালাফি করা শুরু করলো।
আরো কিছুক্ষণ এখানে থেকে সিজান বাসায় ফিরে আসে।
এতো তাড়াতাড়ি আজকে আসতে দেখে জাহানারা চৌধুরী ছেলের কাছে আসে।
” সিজান কোনো সমস্যা?
” কেনো আম্মা.?
” এখন তো তোর অফিস থেকে আসার কথা না।
” আসলে আম্মা ভালো লাগছিল না।
” দেখি দেখি জ্বর টর এলো নাকি আবার?
জাহানারা চৌধুরী তড়িঘড়ি করে ছেলের কপালে হাত দেয়।
” না আম্মা আমি ঠিক আছি। খারাপ লাগছে, কিছুক্ষণ ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।
” আচ্ছা তাইলে তুই গিয়ে ঘুমা।
সিজান, বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। চোখ বন্ধ করতেই আইরিনের মুখ তার সামনে ভেসে উঠে। সিজান শোয়া থেকে উঠে বসে।
” মানে কী? আমি কি মেয়েটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছি? যেখানে যাই সবসময় তার কথা মনে আসে। এইসবের মানে কী? এই মেয়েটা আমার উপর কী তাবিজ দিয়ে গেলো? ওর কথা মাথা থেকে নামাতেই পারছি না।
সিজান বিরক্ত হয়ে ঘরের মেঝেতে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করে। ওর নাম্বারও নেই তার কাছে, যে ফোন করে একটু কথা বলবে।
সিজানের হঠাৎ করে আয়ানের কথা মনে পড়লো।
” কি বোকা আমি? আয়ানকে ফোন দিলেই তো জানতে পারি ওরা কোথায় আছে?
যেই ভাবা সেই কাজ সিজান, আয়ানের নাম্বারে ডায়াল করে। রিং বাজতেই আয়ান রিসিভ করে।
” হ্যালো।
” তোর হ্যালোর গুষ্টি কিলায়। সকালে এসেছিস, অথচ আমাকে কিছু না বলেই চলে গেছিস।
” তুই তো ঘুমে ছিলি,তাই…
” ঘুমে থাকলে ডাকা যায় না,হ্যাঁ? আমি ঘুমে থাকলে, কেউ মরলেও বুঝি আমারে ডাকবি না.?
” আরে তুই এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো,হঠাৎ?
” হাইপার হবো না আমি.?
” কেনো হাইপার হবি?
” আচ্ছা বাদ দে। এখন কোথায় তোরা.? বাসায় গিয়েছিস?
” না, এখনো পথে আছি।
” ইরিন কোথায়?
” পাশেই আসে।
” আচ্ছা পৌঁছে ফোন দিস।
” আচ্ছ রাখি।
” হুম।
সিজান ফোন রেখে বিছানায় মাথা দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যে শুয়ে পড়ে সে।
ঘুম ভাঙে ফোনের রিংটোনের আওয়াজে। পাশ থেকে ফোন হাতে নিতেই দেখে স্ক্রিনে ভেসে আসে ইরিন নামে। সিজান অবাক হয়। ইরিনের নাম্বার তার ফোনে সেইভ ছিলো?
সিজান ফোন রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে ঝাঝালো কন্ঠে কেউ বলে উঠে,
” সমস্যা কী আপনার? কয়টা কল দিয়েছি, খেয়াল আছে আপনার.?
” আরে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।
” কি ঘুম রে বাবা। যেন একটা হাতি। এতো গুলো কল দেওয়ার পরেও তার ঘুম ভাঙে না।
” ভাঙছে তো। কল দেওয়ার কারনেই ভাঙছে। নাহলে ভাঙতো না।
” আপনি জানেন আপনি একটা পাষান লোক.?
” কেনো? আমি আবার কী করলাম.?
” একটা মানুষ যে চলে আসছে। একবারও তার খোঁজ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না.।কি পাষান আপনি।
” তখন ফোন দিয়েছিলাম তো। আয়ানের কাছে খোঁজ নিয়েছিলাম।
” আয়ানের কাছে খোঁজ নিতে হবে কেনো? আমার কি ফোন নাই.?
” তোমার নাম্বার তো ছিল না। মনে করেছিলাম। কিন্তু আশ্চর্য! এখন দেখি তোমার নাম্বার সেইভ করা। কীভাবে হলো?
” আমিই সেইভ করে দিয়েছিলাম। ফোনটা চেক করলেই পেয়ে যেতেন।
” আচ্ছা তার জন্য সরি! এখন কেমন আছো তুমি?
” ভালো আছি। কিন্তু…
” কিন্তু কী.?
” মিস করছি।
” কাকে.?
” কাকে আবার? আপনাকে।
” আচ্ছা।
” আপনি আমাকে মিস করছেন না.?
” আমি কেনো মিস করবো.?
” হইছে মিস করতে হবে না। আপনার সাথে আর কোনো কথা নাই আমার। আপনার সাথে আমার আড়ি।
আইরিন ফোন কেটে দেয়। সিজান, ফোনের দিকে তাকিয়ে হেসে দেয়।
” মেয়েটা দিন দিন তার প্রতি আমাকে দূর্বল বানিয়ে ছাড়ছে। আমিও যে তাকে মিস করতেছি।
সিজান ফোন রেখে দিয়ে ফ্রেশ হতে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে নিচে নামে। জাহানারা চৌধুরী বসে চা খাচ্ছিল। সিজান গিয়ে তার আম্মার পাশে বসে।
” ঘুম হয়েছে? শরীর ঠিক হয়েছে.?
” ঘুমও ঠিক হয়েছে। শরীরও ঠিক হয়েছে।
” আইরিনের মতো একটা মেয়েকে যদি ছেলের বউ বানাতে পারতাম। তাহলে ঘরটা আনন্দে ভরে থাকতো।
” এখন কি দুঃখে ভরে থাকে?
” কথা পেঁচাইস না। যেটা বুঝাতে চাইছি, সেইটা বুঝ।
” আচ্ছা বুঝলাম, তারপর?
” তারপর কি? ফাজলামি করবি না একদম আমার সাথে। তোর বন্ধু আয়ান বিয়ে করে নিয়েছে।তুই বিয়ে করছিস না কেন? আমার কি বউয়ের মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না? নাতি নাতনিদের মুখ দেখতে ইচ্ছে করে না?
” দেখবে দেখবে, সময় হলে সব দেখবে।
” তোর সময়ের খেতে পুরি। তোকে এক সপ্তাহ সময় দিলাম। এর মধ্যে তোর কেউ পছন্দ থাকলে আমাকে বলবি,নাহলে আমার পছন্দে বিয়ের পিরিতে বসবি।